বিশ্বের ১১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারীতে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৩৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ছয় লাখ মানুষ। অর্ধকোটির বেশি রোগী এখনও চিকিৎসাধীন। শুধু গেল ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণের তীব্রতা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দেশগুলোতে সংক্রমণ এখনও চূড়ায় পৌঁছেনি। অর্থাৎ এই চারটি দেশে আগামীতে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে যাচ্ছে করোনা। স্পেনে ৬৭ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত রেকর্ড করা হয়েছে।
মহামারী মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ১টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৩ জন। মারা গেছেন ৫ লাখ ৯৫ হাজার ১৭১ জন। অবস্থা আশঙ্কাজনক ৫৯ হাজার ৯৬৭ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪২২ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৯ জন, যা করোনা মহামারী শুরুর পর একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড। একই সময়ে বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৭৪২ জনের।
বিশ্ব তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩ হাজার ৩৮৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ৯৬৩ জনের, যা আগের দিন ছিল যথাক্রমে ৭২ হাজার ৫ ও ১ হাজার ১ জন।
এ নিয়ে দেশটিতে মোট রোগীর সংখ্যা ৩৭ লাখ ৩০ হাজার ১৩৫ জন, মারা গেছেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৬২ জন।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ হাজার ৮২৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৯৯ জনের, যা আগের দিন ছিল যথাক্রমে ৩৯ হাজার ৭০৫ জন ও ১ হাজার ২৬১ জন। দেশটিতে মোট রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৩৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ৭৬ হাজার ৯৯৭ জনের।
তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৩৫ হাজার ৪৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৬৮০ জনের, যা আগের দিন ছিল যথাক্রমে ৩২ হাজার ৬৮২ ও ৬১৪ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট রোগী ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫ জন, মারা গেছেন ২৬ হাজার ২৮৫ জন।
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি রাজ্যের ব্যাপক অংশ বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করেছেন লাখ লাখ মানুষ। এতে ওই অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।
চতুর্থ স্থানে রাশিয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা ৭ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি, মারা গেছেন ১২ হাজার ১২৩ জন। পঞ্চম স্থানে থাকা পেরুতে মোট আক্রান্ত ৩ লাখ ৪১ হাজার ৫২৫ জন, মারা গেছেন ১২ হাজার ৬১৫ জন।
ষষ্ঠ স্থানে থাকা চিলিতে মোট আক্রান্ত ৩ লাখ ২৬ হাজার ৫৩৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ২৯০ জনের। সপ্তম স্থানে ওঠে আসা দক্ষিণ আফ্রিকায় গেল ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ১৭২ জন, মৃত্যু হয়েছে ২১৬ জনের।
দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৩ লাখ ২৪ হাজার ২২১ জন, মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৬৯ জন। অষ্টম স্থানে মেক্সিকোতে মোট রোগী ৩ লাখ ২৪ হাজার ৪১ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনের।
রেকর্ড পরিমাণ সহায়তার আবেদন জাতিসংঘের : করোনা মহামারী মোকাবেলায় তহবিল গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ১ হাজার ৩০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘ। এটি জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় তহবিল গঠনের আহ্বান।
নিম্নআয় ও নাজুক অর্থনীতির দেশে এ অর্থ খরচ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বছরের শেষনাগাদ সাড়ে ২৬ কোটি মানুষ অনাহারের মুখে পড়তে পারে।
এখনই ব্যবস্থা নিতে না পারলে তা কয়েক দশকে অর্জিত উন্নয়নকে ধ্বংস করে দেবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে তারা।
মালয়েশিয়ার গ্লাভস কোম্পানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা : করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় ব্যাপক চাহিদার পরও বিশ্বের শীর্ষ একটি গ্লাভস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অধীনস্থ দুই কোম্পানি থেকে সার্জিক্যাল গ্লাভস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার টপ গ্লাভ নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি এ তথ্য জানিয়েছে। টপ গ্লাভের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদন বাড়াতে জবরদস্তিমূলকভাবে শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়। ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন জানিয়েছে, তারা টপ গ্লাভের দুটি সহপ্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
স্পেনে ৬৭ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত : বৃহস্পতিবার স্পেনে একদিনে ৫৮০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যা ১০ মের পর অর্থাৎ ৬৭ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৫ জন।
স্কুল বন্ধে সুফলের চেয়ে ঝুঁকি বেশি -ইকোনমিস্ট : করোনা মহামারীতে বিশ্ব অর্থনীতি যেমন থমকে গেছে, তেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের মানসিক বিকাশ। গত এপ্রিলে ব্যাপক হারে ভাইরাস সংক্রমণের মুখে স্কুল বন্ধ করে দেয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়ে বিশ্বের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী।
পরে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে ফের স্কুল খোলায় শিক্ষাবঞ্চিত শিশুর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমে এসেছে। তবে অন্য স্থানগুলোতে এ উন্নয়নের গতি অত্যন্ত ধীর। গবেষণায় দেখা গেছে, নোভেল করোনাভাইরাস শিশুদের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ।
অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীদের এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় অর্ধেক কম। যুক্তরাজ্যের পরিসংখ্যান অনুসারে ৭০ থেকে ৭৯ বছর বয়সীদের তুলনায় ১০ বছরের কম বয়সীদের করোনায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা অন্তত এক হাজার গুণ কম। ফলে স্কুল বন্ধের কারণে সুফলের চেয়ে ঝুঁকিই বেশি।
Leave a Reply